স্টাফ রিপোর্টার : আজ ২২ মার্চ। নবীগঞ্জে মহান স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস। একাত্তরের আজকের এই দিনে নবীগঞ্জে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ চেয়ারম্যান এর নেতৃত্বে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। আব্দুর রউফ চেয়ারম্যান তখন তিতুমীর কলেজের ছাত্র, মহাখালী আঞ্চলিক ছাত্রলীগের সভাপতি এবং স্বাধীন বাংলা ছাত্র পরিষদ মহাখালী আঞ্চলিক শাখার আহবায়ক।
আব্দুর রউফ এর ভাষ্যমতে, ১৯৭১ সালের এই দিনে সকাল ১০ টায় নবীগঞ্জের ডাকবাংলো প্রাঙ্গনে তৎকালীন ছাত্রলীগ ঢাকা মহাখালী আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রউফ সঙ্গীয় সহযোদ্ধা ছাত্রনেতা শাহাবুদ্দিন ও কামাল আহমেদকে সাথে নিয়ে আনুষ্টানিকভাবে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়ার পরামর্শে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্ততি পূর্বে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নবীগঞ্জে আসেন। তাকে সঙ্গ দেন মহাখালী আঞ্চলিক ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, পরবর্তীতে তিতুমীর কলেজের ভিপি নির্বাচিত হওয়া কামাল আহমেদ ও ছাত্রনেতা মো. শাহাবুদ্দিন। তারা ২০শে মার্চ রাতে নবীগঞ্জ এসে তৎকালীন নব নির্বাচিত এমপি আব্দুল আজিজ চৌধুরীর বাস ভবনে উঠেন। পরদিন ২১শে মার্চ সকালে তৎকালীন নবীগঞ্জ আওয়ামীলীগ নেতা ও সংগঠক আব্দুল হক চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছাত্রনেতা আব্দুর রউফ পতাকা উত্তোলনের পরিকল্পনার কথা আব্দুল হক চৌধুরীকে অবহিত করলে তিনি তাতে একাত্বতা পোষণ করেন এবং দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ২২শে মার্চ সকাল ১০.০০ ঘঠিকায় নবীগঞ্জ ডাক বাংলো প্রাঙ্গনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ছাত্রনেতা আব্দুর রউফ পতাকা উত্তোলন কর্মসূচিকে সফল করার লক্ষ্যে মো. বদরুজ্জামান (রাজাবাদ), আব্দুল হান্নান (জিয়াপুর), ছানু মিয়া (নাদামপুর), মোহাম্মদ আলী (বাউসা), আবিদুর রহমান চৌধুরী (চরগাঁও), বশির আহমেদ (বাউসা), মহিবুর রহমান মাশুক(রায়ঘর) প্রমূখ ছাত্রদের নিয়ে দিনব্যাপী নবীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন।
২২শে মার্চ ১৯৭১ইং সকালে ডাক্তার মিম্বারুর রহমান চৌধুরী, আলহাজ হীরা মিয়া, আব্দুল হক চৌধুরী, আব্দুস সোবহান মাষ্টার, আব্দুস সালাম, আজিজুর রহমান চৌধুরী ছুরুক মিয়া, চারুচন্দ্র দাশ, এনাম উদ্দিন (ডিলার), রামদয়াল ভট্টাচার্য্য, আব্দুল মতিন চৌধুরী, মিহির কান্তি রায়, আবু সালেহ চৌধুরী প্রমূখসহ নবীগঞ্জের সকল বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। নবীগঞ্জের ছাত্র জনতা, বিশিষ্ট মুরুব্বিয়ানসহ কয়েকশ জনতার উপস্থিতিতে সেদিন ডাক বাংলো প্রাঙ্গণে উড়ন্ত পাকিস্তানি পতাকা ছাত্রনেতা ভিপি কামাল আহমেদ নামিয়ে এনে আগুন ধরিয়ে দেন। ছাত্রনেতা আব্দুর রউফ সংগীয় ছাত্রনেতা শাহাবুদ্দিনকে নিয়ে তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। তখন গগণবিদারী জয় বাংলা স্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত হয়ে উঠে। নবীগঞ্জ যুগল-কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃৃন্দসহ সাধারণ জনতা এই পতাকা উত্তোলন কর্মসূচিতে স্বতস্ফোর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।